বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম

বিতর নামাজ



আসসালামুআলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ , আশা করি সবাই ভালো আছেন । বাংলা পরামর্শ ব্লগে আজকে আমরা আলোচনা করবো বিতর নামাজ নিয়ে

আমরা জানবো বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম, বিতর নামাজ কয় রাকাত , বিতর নামাজ পড়ার ফজিলত সহ বিতর নামাজ নিয়ে যাবতিয় কিছু। তো চলুন কথা না বাড়িয়ে শুরু করি । 


বিতর নামাজঃ 

বিতর (وتر) শব্দটি আরবি। অর্থ হচ্ছে বিজোড়। এ নামাজ তিন রাকাআত বিধায় এটিকে বিতর বলা হয়।মাযহাব ভেদে কেউ কেউ বিতরের নামাজ এক রাকাআতও পড়ে থাকেন।

ইশার নামাজের পরপরই এ নামাজ পড়া ওয়াজিব। আর রমজান মাসে তারাবিহ নামাজ পড়ার পর জামাআতবদ্ধভাবে ইমামের সঙ্গে বিতর নামাজ পড়া যায়। 

বিতরের নামাজ পড়ার ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিশেষ তাগিদ দিয়েছেন বিতর নামাজ যারা না পড়েন তাদের কে আল্লাহর রাসুল তিরস্কার করে বলেছেন, যে ব্যক্তি বিতর আদায় করবে না, আমাদের জামাআতের সাথে তাঁর কোনো সম্পর্ক নেই। (আবু দাউদ)

বিতর নামাজ পড়ার নিয়মঃ

অন্যান্য ফরজ নামাজের ন্যায় দুই রাকাআত নামাজ পড়ে প্রথম বৈঠকে বসে তাশাহহুদ পড়া। তারপর তৃতীয় রাকআত পড়ার জন্য উঠে সুরা ফাতিহার সঙ্গে অন্য কোনো সুরা বা আয়াত মিলানো। 

কিরাআত (সুরা বা অন্য আয়াত মিলানোর পর) শেষ করার পর তাকবির বলে দু’হাত কান পর্যন্ত উঠিয়ে তাকবিরে তাহরিমার মতো হাত বাঁধতে হয়। তারপর নিঃশব্দে দোয়া কুনুত পড়া। 

দোয়া কুনুত পড়ে পূর্বের ন্যায় রুকু, সিজদার পর শেষ তাশাহহুদ, দরূদ, দোয়া মাছুরা পড়ে ছালাম ফিরানোর মাধ্যমে বিতরের নামাজ সমাপ্ত করতে হয়।

তবে খেয়াল রাখতে হবে তৃতীয় রাকায়াতে  দোয়া কুনুত না পড়ে সিজদায় চলে গেলে নামাজের শেষ বৈঠকে তাশাহহুদ পড়ে সাহু সিজদা করলেই চলবে। আবার ভুলে প্রথম বা দ্বিতীয় রাকাআতে দোয়া কুনুত পড়ে ফেললেও সাহু সিজদা দিতে হবে। সুতরাং বিতরের নামাজ অনেক গুরুত্বপূর্ণ। 

বিতরের নামাজের এই পদ্ধতি হাদিস থেকে সুপ্রমাণিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) সাধারণত তাহাজ্জুদের পর বিতর পড়তেন এবং বিতর তিন রাকাত পড়তেন। তিন রাকাতের দ্বিতীয় রাকাতে তাশাহহুদের জন্য বসতেন, কিন্তু সালাম ফেরাতেন না। সালাম ফেরাতেন সবশেষে তৃতীয় রাকাতে। যেমন—আবু সালামা ইবনে আব্দুর রহমান থেকে বর্ণিত, তিনি আয়েশা (রা.)-কে জিজ্ঞাসা করেন, রমজানে নবীজির নামাজ কেমন হতো? জবাবে তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজানে এবং রমজানের বাইরে ১১ রাকাতের বেশি পড়তেন না। প্রথমে চার রাকাত পড়তেন, যার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা কোরো না! এরপর আরো চার রাকাত পড়তেন, যার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা তো বলাই বাহুল্য! এরপর তিন রাকাত (বিতর) পড়তেন। (সহিহ বুখারি : ১/১৫৪, হাদিস ১১৪৭; সহিহ মুসলিম : ১/২৫৪, হাদিস ৭৩৮; সুনানে নাসায়ি ১/২৪৮, হাদিস ১৬৯৭)।

সাদ ইবনে হিশাম (রহ.) বলেন, আয়েশা (রা.) তাঁকে বলেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বিতরের দুই রাকাতে সালাম ফেরাতেন না। (সুনানে নাসায়ি ১/২৪৮; হাদিস ১৬৯৮; মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা ৪/৪৯৪, হাদিস ৬৯১২)।

ইমাম হাকেম (রহ.) হাদিসটি বর্ণনা করার পর বলেন, হাদিসটি বুখারি ও মুসলিমের শর্ত মোতাবেক সহিহ।

আমিরুল মুমিনিন উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)ও এভাবে বিতর পড়তেন এবং তাঁর সূত্রে মদিনাবাসীরা তা গ্রহণ করেছেন। (মুস্তাদরাক আলাস সহিহাইন ১/৩০৪, হাদিস : ১১৮১)

আবদুল্লাহ ইবনে আবি কাইস বলেন, আমি আয়েশা (রা.)-এর কাছে জিজ্ঞাসা করলাম যে নবীজি (সা.) বিতরে কত রাকাত পড়তেন? জবাবে তিনি বলেন, চার এবং তিন, ছয় এবং তিন, আট এবং তিন, ১০ এবং তিন। তিনি বিতরে সাত রাকাতের কম এবং ১৩ রাকাতের বেশি পড়তেন না। [সুনানে আবু দাউদ ১/১৯৩, হাদিস ১৩৫৭ (১৩৬২); তাহাবি শরিফ ১/১৩৯; মুসনাদে আহমদ ৬/১৪৯, হাদিস : ২৫১৫৯)]

বিতর নামাজ পড়ার সময়ঃ

বিতর নামাজ এশার পর থেকে শুরু করে সুবহে সাদিকের আগ পর্যন্ত পড়া যায় । রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর তাহাজ্জুদ ও বিতর প্রত্যক্ষ করার জন্য আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) এক রাতে তাঁর খালা উম্মুল মুমিনিন মাইমুনা (রা.)-এর ঘরে অবস্থান করেন। তিনি যা যা প্রত্যক্ষ করেছেন তা বর্ণনা করেছেন, তাঁর সাগরেদরা সে বিবরণ বিভিন্ন শব্দে বর্ণনা করেছেন। এখানে সুনানে নাসায়ি ও অন্য হাদিসের কিতাব থেকে একটি বর্ণনা উদ্ধৃত করা হলো—‘মুহাম্মাদ ইবনে আলী তাঁর পিতা থেকে, তিনি তাঁর পিতা আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণনা করেন যে রাতে শয্যা থেকে উঠলেন, এরপর মিসওয়াক করেন, এরপর দুই রাকাত পড়েন, এরপর শুয়ে গেলেন। 

তারপর আবার শয্যা ত্যাগ করেন, মিসওয়াক করেন, অজু করেন এবং দুই রাকাত পড়েন; এভাবে ছয় রাকাত পূর্ণ করেন। এরপর তিন রাকাত বিতর পড়েন। এরপর দুই রাকাত পড়েন। (সুনানে নাসায়ি ১/২৪৯, হাদিস ১৭০৪; মুসনাদে আহমাদ ১/৩৫০, হাদিস ৩২৭১; ত্বহাবি শরিফ ১/২০১-২০২)

সুতরাং যার শেষ রাতে তাহাজ্জুদের জন্য জাগ্রত হওয়ার নিশ্চয়তা রয়েছে, সে তাহাজ্জুদের পরে বিতর পড়বে। যদি বিতর রাতের শুরু ভাগে এশার পর পড়া হয়, তবু উত্তম এই যে দুই-চার রাকাত নফল নামাজ পড়ার পর বিতর আদায় করবে। মাগরিবের মতো আগে কোনো নফল ছাড়া শুধু তিন রাকাত বিতর পড়া পছন্দনীয় নয়। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘তোমরা শুধু তিন রাকাত বিতর পড়ো না, এতে মাগরিবের সাদৃশ্যপূর্ণ করে ফেলবে; বরং পাঁচ, সাত, নয়, ১১ বা এরও বেশি রাকাতে বিতর পড়ো। (মুস্তাদরাকে হাকেম ১/৩০৪, হাদিস ১১৭৮; সুনানে কুবরা বাইহাকি : ৩/৩১, ৩২)

বিতর নামাজ পড়ার ফজিলতঃ

বিতর নামাজের ফজিলত অনেক, রাসুল সাঃ বলেছেন, যে ব্যক্তি বিতর আদায় করবে না, আমাদের জামাআতের সাথে তাঁর কোনো সম্পর্ক নেই। (আবু দাউদ)

আল্লাহ তাআলা উম্মাতে মুসলিমাকে নিয়মিত বিতরের নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Post a Comment

Previous Post Next Post